বুক রিভিউ: বেতাল পঞ্চবিংশতি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে আমরা চিনি একজন শক্তিমান লেখক, সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষা সংগঠক হিসেবে। তাঁর আারও অবদান হচ্ছে বাংলা গদ্যরীতি প্রচলনে তাঁর অবদান। সে হিসেবে বলতে গেলে বলতে হয় বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের সন্ধানের প্রথমদিকে যে ক’জন ক্ষণজন্মা ব্যক্তি ইংরেজি বাবুয়ানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর তাদের অন্যতম। তাঁর সম্বন্ধে অনেক গল্প প্রচলিত আছে সেগুলার কোনগুলা মিথ এবং কোনগুলা সত্য তা যাচাই করা এই অধমের পক্ষে সম্ভব হয় নি।

বেতাল পঞ্চবিংশতি বিদ্যাসাগরের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তিনি এটি রচনা করেন কারণ সে সময় মানসম্মত বাংলা পাঠ্যপুস্তক ছিল না। সাধুভাষায় রচিত হওয়ার কারণে এটি অনেকটাই দুর্বোধ্য। সে হিসেবে আমি নিজেও বেতাল পঞ্চবিংশতি কতটুকু বুঝতে পেরেছি সে প্রশ্ন করাই যায়। তারপরও রিভিউ লিখতে বসলাম যতটুকু বুঝতে পেরেছি তার উপর ভিত্তি করেই।

বেতাল পঞ্চবিংশতি
মৃতদেহের ভেতরে প্রবেশ করা এক বেতালের বলা গল্প নিয়েই এগিয়ে যায় বেতাল পঞ্চবিংশতির প্লট। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

 

 

বেতাল পঞ্চবিংশতি কে আমরা অনুবাদ সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু এটি সরাসরি অনুবাদ নয়। এডুলাইট এর বর্ণনামতে, এটি সংস্কৃত “বেতাল পঞ্চবিংশতি” বা “বৈতাল পঁচিশি” এর আলোকে লেখা। সংস্কৃত লেখকের নাম এবং মূল গল্পের সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে বিদ্যাসাগরের বেতাল পঞ্চবিংশতিতে এক বেতালের গল্প বলা আছে যে পঁচিশটি গল্প বলে।

গল্পের শুরু টা উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের সিংহাসনে আরোহণ নিয়ে। রাজা বিক্রমাদিত্য ঘটনাচক্রে পড়ে যান এক বেতালের পাল্লায়। বেতাল তাকে শর্ত দেয় যে পঁচিশ টা গল্প রাজাকে শুনতে হবে এবং প্রত্যেক গল্পের শেষে রাজাকে বেতালের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বেতালের এই পঁচিশটা গল্পের কারণেই গ্রন্থের নাম হয়  “বেতাল পঞ্চবিংশতি”।

গল্পগুলো কেবলমাত্র গল্প নয়। এর প্রতিটা গল্পই আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে কিছু মেসেজ দেয় গল্পের ছলে। এগুলো আবর্তিত হয় রাজ্য পরিচালনা, মানব-মানবীর সম্পর্কের রসায়ন, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের জাতধর্ম, বিভিন্ন কূটকৌশল ইত্যাদিকে ঘিরে। সে হিসেবে বেতাল পঞ্চবিংশতি নীতিবাক্য এবং রসের এক অপূর্ব সমন্বয়।

বিক্রমাদিত্য তাঁর প্রজ্ঞা এবং ধৈর্য দিয়ে বেতালের সব গল্প শোনেন এবং তাঁর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে তাঁর উদ্দেশ্য হাসিল করেন। যে গল্পগুলো ভালভাবে বুঝতে চাইলে এক বারে বোঝা খুব কঠিন।

বাংলা বই পড়ুন। বাঙালি সত্তাকে আরও ভালভাবে জানুন।

Leave a comment