University Education in Bangladesh: A Crux with No visible improvement

For the last few weeks, a number of universities are boiling with student agitation. The reasons of students’ protest are numerous: from arbitrary expulsion by the administration, allegation of misappropriation of budget to cruel killing of student by the fellow students. This scinerio is not pleasant anyway.

For the last few years it has become a burning question in the academic arena as to why Bangladeshi universities are consistently failing to represent in the regional rankings, let alone the global rankings.

Recent heartending killing of Abrar Fahad, a BUET (Bangladesh University of Engineering and Technology) student by his fellow stundents for expressing his opinion regarding a India-Bangladesh relation has sparked student protest which ultimately led to prohibition of student politics in the said university. The issue has become a burning national issue.

Abrar Fahad was killed by torture by some other students. This cruel fact raised a serious question regarding the academic environment in Bangladeshi universities. Are the universities of Bangladesh capable of producing the manpowers required for building a nation?

No doubt in the fact that the fate of a nation go with its universities. If universities can upgrade the academic environment, it will bring more and more qualified persons to build the future of a country. And if the universities go downwards, there is no scope for a nation to go upwards.

In this context, time has come to reexamine and reassess the universities and their academic environment. There are almost a hundred private universities in Bangladesh run by private initiative. There is a serious question mark on most of the private universities as to their quality of teaching. Now we would rather see the public funded universities.

The number of public funded universities are 46. Among them, Dhaka University is going to celebrate its first century of glory in 2021. Even such a rich university which has shaped the history of the nation faces heavy criticism due to its failure to maintain proper academic environment. Public universities are solely funded by the government and they can hardly attract any remarkable sponsor from corporations or private bodies, as the private sector of the country is itself struggling to survive.

All those public universities are autonomous in black and white. But their autonomous character is seriously questionable. After the brutal killing of Abrar Fahad, the Vice Chancellor of BUET has expressed his powerlessness that he has to ‘convince’ the government for everything. This statement of Vice-Chancellor of BUET poses serious concern regarding the autonomoy of public universities.

মোবাইল কোর্ট: আইনের শাসনের অন্যতম অন্তরায়

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ কালের কন্ঠ পত্রিকার নাগরিক মন্তব্য বিভাগে দুর্নীতি দমন কমিশন এর মহাপরিচালক জনাব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী মহোদয়ের “মোবাইল কোর্ট: আইনের শাসনের শক্তি” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত এক সুহৃদ এর সৌজন্যে সে লেখাটি আমার নজরে আসে। তাঁর সে লেখায় তিনি কতগুলো যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যা আবেগসর্বস্ব বাগাড়ম্বর বৈ কিছু নয়। তাঁর যুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যাক!

শুরুতেই তিনি মোবাইল কোর্টের ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছেন। মোবাইল কোর্টের উৎপত্তি ভারতে। কিন্তু উৎপত্তিস্থলে মোবাইল কোর্টের স্বরূপ কেমন সে কথা বলেন নি। মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক যে মোবাইল কোর্ট গঠন করা হয় সে মোবাইল কোর্ট একটি পূর্ণাঙ্গ আদালত। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার লঙ্ঘিত হয় না কোনমতেই। অপরাধ সংঘটনস্থলে উভয় পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে আদালত রায় প্রকাশ করেন৷ এতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা বিরল।

মহাপরিচালক মহোদয় মোটাদাগে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যৌক্তিক প্রশ্ন। বিচারবিভাগের হাজারো সমস্যা আছে৷ কিন্তু নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগ কে সহযোগিতা করতে কতটুকু আন্তরিক? বরং নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাগণ বিচারবিভাগকে সহযোগিতার বদলে নিজেদের মধ্যে বিচারিক ক্ষমতা তুলে নিতে বেশি আগ্রহী। প্রশাসকদের মধ্যে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের উৎসাহের মাত্রা থেকেই এটা প্রতীয়মান।

মহোদয় অপরাধ সংঘটনস্থলেই বিচারকাজ সম্পাদনের সাফাই গেয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধিতেও এটার অনুমোদন আছে। কিন্তু তার যুক্তি মোটাদাগে এই রকম যে দেখে বিচার করা আর না দেখে বিচার করার মধ্যে বিস্তর ফারাক। কিন্তু তিনি এইটুকু উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন বিচারক বিচারকাজ করবেন সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। বিচারক মনে মনে যতই নিশ্চিত থাকুন না কেন, অপরাধ সংঘটনের সাক্ষ্য প্রমাণ না পেলে আসামীকে খালাস দিতে বাধ্য। এটাই আইনের শাসন। তিনি আইনের শাসন বলতে কি বুঝিয়েছেন ব্যখ্যার দাবি রাখে।

মহোদয় বেশ আবেগঘন ভাষায় রাষ্ট্রের তিন বিভাগের ক্ষমতার সুষ্ঠু বন্টনের কথাও বলেছেন। কিন্তু প্রশাসকের দ্বারা বিচারকাজ কিভাবে মন্টেস্কুর ক্ষমতাবন্টন নীতিকে সমর্থন করে সে ব্যাপারে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব।

মহাপরিচালক মহোদয় আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ দেখিয়ে বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির সাফাই গেয়েছেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি তো খুব ই ভাল ধারণা! আদালতের বাইরে বিবাদমান পক্ষসমূহ তাদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলবেন, এর চাইতে ভাল কিছু হতে পারে? কিন্তু মোবাইল কোর্ট কি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কোন মাধ্যম? আশ্চর্যজনক বটে।

তিনি স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ব্যাপারেও অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। মোবাইল কোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি রীটের কথা বলেছেন। এর চাইতে আশ্চর্যজনক যুক্তি আর হয় কি? মোবাইল কোর্ট কাদেরকে জরিমানা করে? এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপীল করার ই আর্থিক সঙ্গতিই অনেক আসামীর থাকে না। আর তাঁরা আসবেন হাইকোর্টে রীট করতে? আক্ষরিক অর্থেই মহাপরিচালক মহোদয় কানারে হাইকোর্ট দেখানোর প্রয়াস চালিয়েছেন।

আর মোবাইল কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়া টা হচ্ছে এক ধরণের সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া যেখানে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের একেবারেই সীমিত। যে বিচারপ্রক্রিয়ার কোন বিস্তারিত লিখিত বিবৃতি থাকে না। এই অবস্থায় যতই আপীলের সুযোগ থাকুক না কেন, কোনভাবেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই।

তিনি নানাভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, প্রশাসকদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা কিভাবে প্রশাসকদের হাত কে শক্তিশালী করেছে। জরিমানার টাকার একটা লম্বা ফিরিস্তি দেখিয়ে তিনি দেখিয়েছেন এটা শাসনের জন্য কতটা উপযোগী এবং মারাত্মক অস্ত্র। একজন প্রশাসক কারাদন্ড দেয়ার এবং জরিমানা করার ক্ষমতা পকেটে নিয়ে ঘুরলে যে লোকে তাঁর ভয়ে তটস্থ থাকবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে? কিন্তু এটার অপব্যবহার রোধ করার কি কোন মেকানিজম আছে? এর কোন সদুত্তর এর অভাবেই সততা আর যোগ্যতায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু যে প্রশাসক নির্বাহী ক্ষমতা নামক এক সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না, বরং বিচারিক ক্ষমতাও দরকার পড়ে, তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি অযৌক্তিক হবে?

এছাড়া জনগণের প্রতিবাদ করার যে সাংবিধানিক অধিকার সেই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত কিভাবে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারেও আশ্চর্যজনক নীরবতা পালন করেছেন। ঠিক যে কারণে এটি সরকারের কাছেও অত্যন্ত আদরণীয়।

পরিশেষে আমি মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে গলা মিলিয়েই বলতে চাই, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ এর ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনটি বিভাগের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছাড়া কোনভাবেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর এই সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে আর শাসন ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতেই থাকবে। আর এর উল্টোটা হলে সমন্বয়হীনতা চলতেই থাকবে।

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ: এক অসামান্য জীবন দর্শন

অনুকরণ, লোকরঞ্জন আর সমাজরক্ষার জন্য যাপিত জীবনে কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি কোন কাজটাতে আমরা সুখ পাই? “লোকে কি ভাববে” এই ভাবনা যখন আমাদেরকে তাড়িত করে তখন আত্মার সাথে আমরা সম্পর্কটুকু হারিয়ে ফেলি।

প্রচন্ড হতাশায় যখন জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন একটা মৃতপ্রায় বেগুনচারাকে বাঁচিয়ে তোলাতেও জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। একটা বস্তির ছেলেকেও সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার প্রচেষ্টাতেও জীবনকে উপভোগ করার উপাদান আছে। ভদ্র সমাজের কোট-টাই কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের বুকে শখের সবজি চাষীরা হয়তো অর্থনৈতিক ভাবে কোন দিন লাভবান হতে পারবেন না, কিন্তু এতে মাটির সাথে যে সম্পর্ক টা তৈরি হয় সেটা একজন কৃষকের জীবনের মর্ম উপলব্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

সবাই আমরা আহমদ ছফা হতে পারব না। আহমদ ছফা হতে গেলে যে সাহস, যে ত্যাগ প্রয়োজন, সেটা আমাদের অনেকেরই নেই। কিন্তু আমরা কি চাইলেই একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হতে পারব? যেটা আমরা মনে মনে সবসময় কামনা করি! এই যে সকলের মধ্যমণি হওয়ার জন্য আমরা যেভাবে চুলোচুলি করি, ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরি আর পিছনে দাঁড়িয়ে মানুষের পিন্ডি চটকাই, এতে কি আদৌ আমাদের স্বস্তি মেলে? তারচেয়ে বরং একটা ফুলগাছে ফুল ফোটানোর যে তৃপ্তি সেই তৃপ্তি পাওয়ার জন্য আমরা কতটুকু চেষ্টা করি?

আসলে সদা সর্বদা লোকের সম্মান অর্জন ই জীবনের হতে পারে না। জীবনের উদ্দেশ্য আরও গভীর আরও সহজ! জীবনের উদ্দেশ্য নিহিত সৃষ্টিতে, জীবনের সৌন্দর্য নিহিত যত্নে! এ কারণেই একজন কুমারের মাটির পাতিল আর একজন ভাস্করের সিমেন্টের ভাস্কর্যের মধ্যে কোন তফাত নেই। দুটোই ঘাম ঝরানো সৃষ্টি। কোন টায় হয়তো রোজ কর্পোরেশনের লোকজন এসে ধুলো ঝেরে দেয়, আর কোন টা হয়তো অযত্নে পড়ে থাকে! তাতে কি এসে যায়? দুটোই বানানোর সময় শিল্পীর যে সৃষ্টির আনন্দ সেটার তুলনা হয় কি অন্য কিছুতে?

আপাতদৃষ্টিতে অহেতুক যে কোন কাজের সাথেই একটা হেতু জুড়ে দিলে কাজটি কিন্তু মহান হতেই পারে! লোকে হয়তো সেটাতে পাগলামি খুঁজে পাবে, কিন্তু একবার যখন কেউ কোন কাজে তার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পায়, সেই উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার আনন্দ বড়ই নির্মল এবং পবিত্র।

আর যখন এভাবে কাজের সম্মানী দিয়ে না মেপে কাজ কে যখন আমরা জীবনের উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়ে দেখি তখনই একটা অসাধারণ একটা সাম্যবাদী দর্শন গড়ে ওঠে আমাদের মনের মধ্যে। তখনই দেখতে পাই, ভোররাতে কর্মযজ্ঞ শুরু করা কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার আর ন’টার সময় অফিসে আসা বড় সাহেব উভয়ই আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ!

গাভী বিত্তান্ত এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়

জওহরলাল নেহেরুর একটা কথা আমার খুব প্রিয়। উনি বলেছেন যদি কোন দেশকে ভালভাবে দেখতে চাও তাহলে সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকাও। বাস্তবিকই তা সত্য। কোন দেশে ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু সেই দেশ খুব খারাপ চলছে এরকম নজির দুনিয়ায় নেই। আবার কোন একটা দেশে খুব ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু সে দেশটা দীর্ঘদিন মাথা নিচু করে আছে এরকম দেশও পাওয়া যাবে না।

আমাদের দেশেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আছে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এক বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। কিন্তু প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয় আসলে চলছে কেমন? সাম্প্রতিক সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিং এর সুবাদে এ ব্যাপারে আমরা ধারণাও পাই। কিন্তু কেন এই দশা? একটি কালজয়ী স্যাটায়ার লিখে এ ব্যাপারে ইতিহাসের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন আহমদ ছফা। হ্যাঁ আহমদ একজন ই আছেন! তিনি জীবনটা বলতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। নানা লেখায় তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দেশের অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেছেন। আর গাভী বিত্তান্তে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন খুব ই সূক্ষ্ম ইঙ্গিতে। ইঙ্গিত গুলো সূক্ষ্ম হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে সময় কাটানো যে কোন পাঠকের কাছেই ইঙ্গিত গুলো দুর্বোধ্য থাকে না।

কাহিনীর শুরু টা হয় আবু জুনায়েদ নামক কল্পিত এক প্রফেসরের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই যে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি বুঝতে কষ্ট হয় না। তো সেই আবু জুনায়েদ প্রফেসর হলেন যাঁর কোন প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকলে কি হবে! ক্ষমতার মহিমায় তিনি ঠিকই বুঝতে পারেন কি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চেয়ারখানা পাকাপোক্ত থাকবে।

কোন দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে সেই দেশের রাজনীতি। সেই হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্তা হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যতটা না মানুষ গড়ার কারখানা তারচেয়ে শত শত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের চাবিকাঠি। সাদা চোখে এখানে ক্লাশ আড্ডা হরেক রকম অনুষ্ঠান আর শ্লোগান চোখে পড়লেও একটু তলিয়ে দেখলে এর অন্ধকার দিকগুলি চোখে পড়বে।

এখানে ক্যান্টিন বরাদ্দ দেয়া থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণ পর্যন্ত প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবানদের একটা ভাগ থাকে। তাদের ভাগ না দিলে ব্যবসায়ীরা এখানে কোন ব্যবসাই করতে পারবে না। প্রভাবশালীদের শান্ত রাখতে পারলে ক্যান্টিনের একদম বাসি খাবারও ঠিক আছে। আর তাদের ভাগ না দিয়ে যদি খাঁটি কাঁচামাল দিয়েও নির্মাণকাজ করা হয় তারপরও হৈচৈ বেঁধে যাবে নিশ্চিত। আর সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকাদারি করেন, হোক সেটা ভবন নির্মাণ অথবা ক্যান্টিন পরিচালনা, তাঁরা নিজেদের বাঁচাতেই কাজ কিংবা খাবারের মানের চাইতে প্রভাবশালীদের তুষ্ট রাখতেই বেশি মনোযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ঠিকাদার এর ভাষ্যমতে কি দরকার এসব ছোটলোকদের চটিয়ে খামোখা ঝামেলায় জড়ানোর!

মানে এখানে আন্দোলন হয়, মিছিল হয়, রাজনীতি হয়, খুনোখুনি হয় সব ই হাতে গোনা কিছু মানুষের পকেটের স্বার্থে। আর উপাচার্যের পদে যিনি বসবেন তাঁর কাজ হচ্ছে সবার স্বার্থের মধ্যে একটা সমন্বয় করা। এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যেন সরকার কোনভাবে ক্ষিপ্ত না হন। আজীবন নির্বিরোধ আবু জুনায়েদ জানেন কিভাবে কাউকে না চটিয়ে চেয়ার খানা ঠিক রাখতে হয়। উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করেন উপাচার্যের অফিসের চাইতে চিড়িয়াখানা কিংবা গোয়ালঘরে বসে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা অনেক সহজ। যেখানে চারপেয়ে পশুর চাইতে স্বার্থান্বেষী পশুর আনাগোনাই বেশি। যে গোয়ালঘরে এসে বাঘা প্রফেসরও এসে মেনি বিড়াল হয়ে যায় কেবলমাত্র একটা বড় ফ্ল্যাট বরাদ্দের আশায়! সেখানে হলে একটা সিটের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ভাইএর কাছে ঘাড় মাথা বিক্রি করে দেবেন এতে অবাক হওয়ার কি আছে?

জাতীয়তার ভিত্তি ভাষা হওয়া জরুরি কেন?

যোগাযোগের মাধ্যম ভাষা ই জাতীয়তাবোধের একমাত্র ভিত্তি হতে বাধ্য

জাতীয়তা খুব সংবেদনশীল একটা বিষয়। আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে এই জাতীয়তাবোধ। ভবিষ্যতে এই রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না এটা নিয়ে যখন অগ্রসর মানুষজন আলোচনা করছেন তখন আমরা আজও মননে আমাদের জাতীয়তা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারি নি। যে কারণেই অত্র লেখার অবতারণা। অত্র লেখায় আমি এক্কেবারে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে জাতীয়তার ভিত্তি ভাষা হওয়ার সুবিধা নিয়ে দু’একটা কথা বলার চেষ্টা করব।

উড্রো উইলসন সাহেব যখন ঘোষণা দিলেন প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে তখন সারা পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণ সেটাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পেলে উপনেবেশিক শোষণ থেকে তারা মুক্ত হবেন এবং স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার নিজেরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

তারমানে জাতীয়তা ব্যাপারটা গুরুত্ব পায় যখন এটা রাষ্ট্রের সাথে জড়িয়ে যায়। আর এইখানেই ভাষার গুরুত্ব টা জাতীয়তার ভিত্তি হিসেবে।

রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আরও সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে জনগণ রাষ্ট্রে কতক ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেন তাদের অধিকারগুলো বাস্তবায়নের জন্য। হাঁটার জন্য রাস্তা দরকার, জনগণ রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের হাতে ট্যাক্সের টাকা তুলে দিয়ে বলবেন আমার জন্য রাস্তা বানাও। এভাবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, শিক্ষার জন্য স্কুল, এমনকি ঘুমানোর জন্য ঘর কিংবা খাওয়ার জন্য ভাত এর বন্দোবস্ত করার জন্য জনগণ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হাতে টাকাপয়সা ও প্রয়োজনীয় ক্ষমতা তুলে দেন।

আর রাষ্ট্রের কাজ হল জনতার দেয়া এই আমানত গুলো সঠিকভাবে জনকল্যাণার্থে খরচ করা। শুধু অধিকার নয়, জনগণের যে স্বাধীনতা যেমন ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এই স্বাধীনতা গুলোও রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

তারমানে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি (সরকারের কর্মকর্তাগণ) আর শাসিত সাধারণ জনগণের মধ্যে সুস্পষ্ট দেয়া-নেয়ার একটা সম্পর্ক আছে। আর এই সম্পর্ক টা ততক্ষণ ই ভাল থাকবে যতক্ষণ শাসক আর শাসিতের মধ্যে একটা কার্যকর যোগাযোগ বিদ্যমান থাকবে। আর এই কার্যকর যোগাযোগ টা কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব? উত্তর একটাই উভয়ের ভাব প্রকাশের মাধ্যম অর্থাৎ ভাষা এক হতে হবে।

সুতরাং শাসন (Governence) যদি হয় রাষ্ট্র গঠনের মূল উদ্দেশ্য আর এ রাষ্ট্রের ভিত্তি যদি হয় কোন জাতীয়তাবোধ তাহলে সেখানে ভাষা ভিন্ন অন্য কোন ভিত্তি খোঁজা ভিত্তিহীন। আর যদি একাধিক ভাষাভাষী লোকজন কে নিয়ে যদি রাষ্ট্র গঠন হয় তাহলে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন প্রত্যেক টা মানুষ তার অধিকারের কথা মাতৃভাষায় প্রকৃত কর্তাব্যক্তির কানে দিতে পারে।

আর ভাষা বাদে অন্য কোন কিছুর ভিত্তিতে জাতীয়তা গঠনের প্রস্তাব সাধারণের মঙ্গল নিশ্চিত করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হতে বাধ্য।

চকবাজার: দুর্ঘটনা নাকি অনুমিত বাস্তবতা?

চকবাজারের বাতাসে আজ পারফিউমের গন্ধ। যে পারফিউম লাশের গন্ধ আর আহাজারি  ঢাকতে অক্ষম। শিল্পমম্নন্ত্রী  নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এর ভাষ্যমতে চকবাজারের আগুনের সাথে কেমিক্যালের কোন সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার প্রতিক্রিয়ায় জানান এসব এলাকায় হয় মানুষ বসবাস করবে না হয় শিল্পকারখানা থাকবে। মানে একই সাথে আবাসিক এলাকা আর শিল্পকারখানা-গোডাউন এগুলা থাকতে পারবে না।

images-1
চকবাজারের ঘটনা টা যতই ট্র‍্যাজিক হোক না কেন, অপ্রত্যাশিত নয় মোটেই।

গুদামের পারফিউম কেমিক্যালের সংজ্ঞায় পড়ুক আর না পড়ুক, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে যে গুদাম গুলোর যথেষ্ট অবদান আছে এ ব্যাপারে আমরা একটা পজিটিভ অনুমান করতেই পারি।

 

এছাড়াও সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিস যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারা, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পর্যাপ্ত পানির অভাব যে ক্ষতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সে ব্যাপারেও আমাদের অনুমান করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। দুটো কমিটি হয়েছে,  কমিটি গুলোর রিপোর্টে আমরা জানতে পারব ঠিক কি কারণে আগুন লেগেছে আর ঠিক কি কারণে ক্ষতির ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব হয় নি।

চকবাজারের ঘটনা টা যতই ট্র‍্যাজিক হোক না কেন, অপ্রত্যাশিত নয় মোটেই। এটা একটা ধারাবাহিকতা। নিমতলী, তাজরীন, রানা প্লাজা, চকবাজার এগুলা একই সূত্রে গাঁথা। এগুলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে যে এর ধারাবাহিকতা থেমে যাবে এরকম কোন সম্ভাবনা দেখি না। আর এর কারণ হিসেবে যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই অবকাঠামো তৈরি সেটাও আমরা ধরে নিতে পারি।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য অবকাঠামো তৈরিতে কোন পরামর্শ দেয়া না। বা নগর- অবকাঠামোর কোন পরিকল্পনা তৈরি করাও না। লেখা টা আসলে একটা প্রশ্নকেই ঘিরে, কেন আমরা পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি?

আমরা কয়েকটা সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করতে পারি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হতে পারে-

১. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নে সদিচ্ছার অভাব;

২. মাত্রাছাড়া দুর্নীতি; অথবা

৩. অবকাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়নে অক্ষমতা।

ধরেন, প্রথমে আমরা সদিচ্ছার ব্যাপারটা নিয়েই ভাবতে পারি। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ যারা আছেন, তাদের সদিচ্ছা কি আছে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করার? আমাদের একটা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আছে। কিন্তু সেটার স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিধিমালা অনুমোদিত অনেক অবকাঠামো ই আমাদের জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না সেটার পুনর্মূল্যায়ন জরুরী। দ্বিতীয়তঃ যে বিধিমালা আছে সেটার যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা আছে কি না, সে ব্যাপারেও আমাদের একটু খোঁজখবর নিতে হবে। ঠিক কতটি ইমারত বিধিমালা পুঙখানুপুঙখ মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে যদি আমরা খোঁজখবর নেই তাহলে খুব আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাই না। অনেক সরকারি ভবন ও আইন মেনে তৈরি করা হয় না। ব্যক্তিমালাধীন ইমারত এর ক্ষেত্রে সেটা কতটা করুণ সেটা সহজেই অনুমেয়।

মালিকপক্ষের সদিচ্ছার ব্যাপারে কথা তুলে লাভ নেই। উদীয়মান অর্থনীতির এই দেশে যে কোন মালিক ই চাইবে অনুমোদনের চাইতে যে কোন ভাবে হোক একটু বেশি স্পেস নির্মাণ করা। এটার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠান তার কি অবস্থা? রাজউকের কর্মকর্তা যেখানে দুর্নীতির বরপুত্র আখ্যা পায়, বর্তমান মন্ত্রী যখন দায়িত্ব পেয়েই এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেয় তখন এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির হালহকিকত সম্পর্কে নিরাশ না হয়ে উপায় থাকে না।  তাইলে উচ্চাভিলাষী মালিকপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

মালিকপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিদের সদিচ্ছা তো নেই ই। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে কর্তাব্যক্তিরা মালিকপক্ষের সাথে রুটি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। তো সদিচ্ছা আর দুর্নীতি উভয় ব্যাপারেই আমাদের ফাইন্ডিং খুব ই করুণ।

এবার আসি একটি সুচারু নগর পরিকল্পনা প্রণয়নে আমাদের সক্ষমতার ব্যাপারে। ঢাকা শহরের নগর পরিকল্পনার ব্যাপারে আমাদের একটা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান ও আছে। সেটারও কার্যকরিতা এবং প্রয়োগ নিয়ে নানাবিধ সন্দেহ ও আছে।

আমাদের একটা গর্ব করার মত বিশ্ববিদ্যালয় আছে বটে৷ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে পুরকৌশল, নগর পরিকল্পনা ইত্যাদি ব্যাপারে পাঠদান হয়ও বটে। তবুও যখন আমাদের ডেল্টা প্ল্যান করার সময় নেদারল্যান্ডসের কারিগর প্রয়োজন হয়, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর পরিকল্পনাও যখন আমাদের নিজস্ব প্রকৌশলীদের দ্বারা করার সাহস হয় না, তখন খটকা লাগে বৈকি! আসলেই কি আমরা আমাদের দেশটা আমাদের মত করে পরিকল্পনা করে সুচারুরূপে পরিচালনা করতে পারি? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি সে রকম জনবল তৈরি করতে পারছে? আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন কি সেভাবে হচ্ছে?  রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনস, নিমতলী কিংবা চকবাজারের মত ট্র‍্যাজেডি গুলোকে কি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি?

আমরা কি এমন একটা বাস্তবসম্মত নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারি যে নগরে লোকালয়ে কোন কারখানা বা গুদাম থাকবে না? যেখানে রাস্তার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুন ঘরে ঢুকবে না? যেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস অনায়াসে ঢুকতে পারবে? যেখানে পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে না? সর্বোপরি যে নগরে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারব? নাকি আহাজারি ই আমাদের নিয়তি?

মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে না পারার আক্ষেপ!

রাষ্ট্রভাষা আর মাতৃভাষার পার্থক্য টা কি? মাতৃভাষা হল যে ভাষাটা আমরা মায়ের মুখে শুনে বড় হই। দৈনন্দিন যোগাযোগ বিশেষ করে মৌখিক যোগাযোগ টা মাতৃভাষায় করি আমরা। আর রাষ্ট্রভাষা হল মোটাদাগে রাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা। সেটা তৃণমূল পর্যায়ে একটা দরখাস্ত লেখা থেকে শুরু করে অতিরাষ্ট্রিক যোগাযোগ পর্যন্ত বিস্তৃত।

images
শহীদ মিনার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি।

১৯৫২ সালে বাঙালিই মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় অধিষ্ঠানেএ জন্য রক্ত দিয়েছিল। সে এক গৌরবময় অধ্যায়। সেই রক্তদানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল ভাষার উপর ভিত্তি করে সে সংগ্রাম বাঙালিকে স্বকীয় জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ‘৫২ আমাদের শিখিয়েছিল যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মেরুদন্ডটা সোজা করলে সাফল্য পাওয়া যায়। এবং এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি একটি মানচিত্র এবং একটি স্বাধীন জাতিসত্তা।

যদি বলি সাফল্য টা ওই পর্যন্তই। বাস্তবক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা কিংবা রাষ্ট্রভাষার যে সুফল পাওয়ার কথা ছিল সেটা থেকে আমরা নিদারুণভাবে বঞ্চিত, তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে? মাতৃভাষা এবং মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষদের দুরবস্থা সাক্ষ্য দেয় যে মাতৃভাষার সুফল আমরা এখনো পাইনি।

আজকে কতজন সাধারণ মানুষ তাদের মাতৃভাষায় রাষ্ট্রের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে? কতজন শিক্ষার্থী মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জন করে দক্ষ হয়ে উঠতে পারছে?

মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর মূল উদ্দেশ্য টা হল রাষ্ট্রের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী টা যাতে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ছিটকে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে না যায়। মাতৃভাষা বাদে অন্য কোন ভাষা না জানার কারণে যাতে সে মৌলিক সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়ে না যায়।

কিন্তু আদতে কি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থগুলোকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে? শুধুমাত্র মাতৃভাষা কি একজন প্রান্তিক মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারছে? ভাববার বিষয় বটে।

আমরা একমত হতে পারি যে শুধু মাতৃভাষা একজন প্রান্তিকের স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট হচ্ছে না। কেন বলছি? কারণ মাতৃভাষা দিয়ে একজন মানুষ আজকে কোন শিক্ষাতেই আজ শিক্ষিত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বলেন আর জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম কারিগরি শিক্ষাটুকুও সে মাতৃভাষায় শিখতে পারছে না৷

একটা উদাহরণ দেই ৷ একজন কৃষক যে মাতৃভাষা পড়ে বুঝতে পারে, তার ফসলের সেচের জন্য যদি একটা ডিজেল ইঞ্জিন বাজার থেকে কিনে আনে সেটার নির্দেশিকা টা কিন্তু সে ইংরেজিতে কিংবা চায়নিজ কিংবা কোরিয়ান ভাষায় লেখা পাচ্ছে। বাংলাতে না। ফলে এ বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।  ফলে তাকে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে অন্যের উপরে। বা একজন চিকিৎসক এর লেখা নির্দেশনা বোঝার জন্য তাকে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে দোকানদার এর উপর। বা তার নিযুক্ত উকিলের লেখা আইনী পরামর্শ বোঝার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে পাড়ার মাস্টার মশাই এর কাছে।

এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ইংরেজি আর দাপ্তরিক সাধু বাংলার কোন তফাৎ নেই। দুটোই একজন সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য।

তারমানে ইংরেজি বা দাপ্তরিক সাধু বাংলা না জানার কারণে তাকে রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেই থাকতে হচ্ছে৷ অথচ তার মুখের ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষাই হওয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রের এই ভাষাগুলি।

তাহলে আমরা কি ইংরেজি ভাষা বা বিদেশি ভাষাকে বর্জন করব? তাহলে তো আমরা একঘরে হয়ে যাব যেটা বাস্তবসম্মত নয় মোটেই। বরং উল্টোটাই এক্ষেত্রে আমাদের সমাধান দিতে পারে। সেটা হল আমাদের একাধিক ভাষায় দক্ষ প্রচুর বিশেষজ্ঞ দরকার।

সহজ করে বলি। একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের ইংরেজি জানার দরকার নেই (যদি বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা না থাকে)।  কিন্তু তাকে ইংরেজি শিখতে হচ্ছে। কারণ তার পাঠ্যপুস্তক ইংরেজিতে লেখা।  আর ইংরেজিতে অদক্ষতার কারণে সে দ্রুততার সাথে তার কারিগরি দক্ষতা টাও অর্জন করতে পারছে না। ফলে তাকে আগে ইংরেজির বৈতরণী পার হয়ে কারিগরি জ্ঞান সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কিন্তু তার কারিগরি জ্ঞান টা যদি সহজবোধ্য বাংলায় সরবরাহ করা যেত? তাহলে সে নিঃসন্দেহে দ্রুততার সাথে আরও দক্ষ হয়ে উঠত।

জ্বি, আপনি ধরতে পেরেছেন। আমি মাতৃভাষায় জ্ঞানভান্ডার উন্মুক্ত করার কথা বলছি। আর সেটা কিভাবে সম্ভব? বাংলা ও ইংরেজি কিংবা ক্ষেত্রমত অন্যান্য ভাষায় প্রচুর দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ১২ বছর ধরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক  পর্যায়ে পড়াশোনা করে আমরা ইংরেজি টা আয়ত্তে আনতে পারি না। মাদ্রাসায় ১২ বছর আরবী পড়ানোর পরও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করার মত ২ জন আরবী জানা মানুষ বের হচ্ছে না।

জ্বি ভাই, আমি ভাষার মাসে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে বিদেশি ভাষা বেশি করে এবং আরও কার্যকর ভাবে শেখার কথা বলছি। বেশি বেশি ভাষা না জানলে এবং সেসবের প্রচুর চর্চা না থাকলে মাতৃভাষা সমৃদ্ধ হবে না না না। আর তা না হলে রফিক, সালাম, বরকত জব্বারের পবিত্র রক্ত বৃথা যাবে।

 

Continue reading “মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে না পারার আক্ষেপ!”

Movie Review: The Whistleblower

What an individual can do against a highly organised crime? Where the perpetrators involved are highly influential and have strong camouflages to protect them, what an individual can do? Maybe he or she can do nothing noticably, but what he or she can do is blowing whistle. At least people would hear him or her. It may not bring the perpetrators concerned into justice, but surely it can reduce the crime. As a side-effect he or she may loss his or her job.

whistleblower

When the criminals have diplomatic immunity, can they use it to ensure their impunity? The answer is, if they are not checked and balanced, if they are not monitored properly, if transparency is not ensured, it can be so.

Similar things happened when a war broke-out due to racial hatred in Bosnia-Herzegovina. After the war, the UN troops took over the country to restore peace. But peacekeepers also are human-being, they also have some weak-points. They got involved in forced prostitution, sex-slavery and astonishingly sex-trafficking. The total event is discovered by Kathrin Bolkovac an American Police official, who his so dedicated to her profession, that consequently she got divorced and lost custody of her children. She was helped by another enthusiastic right activist Madeleine Rees, who apparently failed to back her up.

Consequently, Kathrin Bolkovac was put under pressure to give up the investigation which will expose a heinous scandal and finally got dismissed illegally. However, she did not stop and continued whistleblowing.

Based on the above true story, Canadian Director Larysa Kondracki, made a film starring Rachel Weisz, Venessa Redgrave and Monica Bellucci.  A prominent role of Taya, one of the victims,  was played by Roxana Conduarche.

The film was first offered to Rachel Weisz in 2005 when she was pregnant, but then in 2009, she did the role. Kondracki worked for 8 years to come the film into light.

Anyone who wants to know, what a one-man-army looks like in real life, must watch the film. Regarding the making of the film, some critics found out that language consultancy was below average, but above all, I personally appreciate what Kondracki did for eight years. Imdb rating is average, But I gave it 10 out of 10. Happy Watching.

ডাকসু নিয়া দুইটা কথা

গণতন্ত্রায়নের কথা বললে অনেক সুশীল আছেন যারা বলেন ‘আমরাও ডাকসু চাই কিন্তু…….’ এই বলে একটা লেজ লাগায় দেন, যাতে আপনার মনে হবে ডাকসু ওনারাও চান, এবং তাদের পন্ডিতি আপনাকে এতটাই বিমোহিত করবে যে, আপনিও ভাবতে শুরু করবেন “নাহ! আসলেই ডাকসু নির্বাচনের আগেই আমাদের একটা সুদৃশ্য ভবন দরকার। ছাত্রসংগঠনগুলাতে স্বচ্ছতা দরকার। ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করা দরকার।” এঁদের সুশীল কথাবার্তায় আপনার মনে হবে এঁরা চায় ডাকসু আসলে এনারাই চান, কিন্তু কোন ভাঙাচোরা ডাকসু চান না, বরং ডাকসু চান এমন ডাকসু যেটা হবে একদম নিখুঁত। এরা আপনারে বোঝাবে আর এখন না, আর কিছুদিন পর ডাকসু নির্বাচন হলে সেটা হবে আদর্শ সময়।

এরা নিরাপত্তার দোহাই দেবে। বলবে এখন ডাকসু হলে মারামারি হবে। আপনি কি বুঝতে পারছেন এঁদের প্রচ্ছন্ন হুমকি টা? এরা হচ্ছে বর্তমান সিস্টেমের সুবিধাভোগী। নির্বাচন হলে এদের কর্তৃত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাবে। তাই এরাই বলপ্রয়োগ করে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সচেষ্ট হবে।

এদেরকে চিনে রাখা দরকার বৈকি! কারণ এরা সব সময় সিস্টেমের পক্ষে এবং সিস্টেমের সুবিধাভোগী। ডাকসু নির্বাচন যখন বাস্তব হয়ে সামনে আবির্ভূত হবে, তখন এরাই বলবে ‘আমরাও তো ডাকসু নির্বাচন চেয়েছিলাম, আমরা চাই বলেই তো এটা সম্ভব হইছে’! এদের চেতনাগত পূর্বসূরিরাই ১৯৭১ এ বলেছিল ‘আগে পাকিস্তান টা তো ধরে রাখি, তারপর গণতন্ত্র নিয়া ভাবা যাবে’।

 

images-1
সমাজ-প্রগতির প্রতীক এবং লালনভূমি নিজেই আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। ছবি: উইকিপিডিয়া।

আরেকদল সুশীল আছেন, যারা আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, ডাকসু হলে আসলে কোন লাভ ও নেই ক্ষতিও নেই। তাই ডাকসুর জন্য এত তেলেসমাতি বৃথা! এরা বলবে যে, আরে বাবা যাই হোক না কেন! ডাকসু থাক আর না থাক। দলের হাইকমান্ড যাকে বিবেচনা করবে তাকেই না ডাকসু তে বসানো হবে। ডাকসু হলেও তো সোহাগ-জাকির ই হবেন ডাকসুর ভিপি-জিএস!

এদের কথায় কিছুটা সত্যতা আছে! কিন্তু এরা কারা এদের পরিচয় আগে জেনে নেয়া যাক! এরা হচ্ছেন তারাই যারা মনে মনে দলের হাইকমান্ডের অনুগ্রহ প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় এরা আজ সুশীল!

কে নেতৃত্বে আসবে ওটা নিয়া কথা বলার আগে কোন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব উঠে আসছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সোহাগ-জাকির নেতৃত্বে থাকলে কি সমস্যা? যদি তারা গণতাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেন তাহলে অবশ্যই তারা যাদের ভোটে নির্বাচিত হবেন, তাদের প্রতিই কৃতজ্ঞ থাকবেন। তাদের জন্য জান-প্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করবেন। কারণ তারা বিচ্যুত হলে তাদেরকে নামায় দেয়ার মত নির্বাচকমন্ডলী দাঁড়িয়ে আছেন।

 

আরেক শ্রেণীর তাত্ত্বিক বলবেন যে ডাকসু নির্বাচন হলে শিবির বিশৃঙখলা তৈরির প্রয়াস পাবে। এরা আসলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত। এরা নিজেদের ব্যর্থতাগুলা শিবিরের ধুয়া তুলে ঢাকতে চায়। এদেরকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করবেন শিবিরের উত্থান কবে থেকে? একটু টাইমফ্রেম টা জানতে চাইবেন। ৯০ এর পরেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিবিরের উত্থান হয়। যখন থেকে ছাত্র-সংসদ গুলোতে আর নির্বাচন হচ্ছে না।

কি কিছু বুঝতে পারছেন না? আসলে দম বন্ধ করা পরিবেশেই পোকামাকড়ের জন্ম হয়। ফুল ফোটার জন্য উদার-অনুকূল পরিবেশ দরকার হয়। শিবিরের মত একটা চরমপন্থি সংগঠন, যাদের কর্মীরা হলো রোবটসদৃশ, তারা বিকশিত হয় অগণতান্ত্রিক পরিবেশেই! এক-এগারোর পর ছাত্রদল কই ছিল? ছাত্রলীগ কই ছিল? তারা নিজেদের মধ্যে ঠোকাঠুকি করছে আর সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ করছে! আর শিবির? বড় বড় অডিটোরিয়াম ভাড়া করে তারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে গেছে!

যে কোন অগণতান্ত্রিক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিই চরমপন্থীদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড! পাশের দেশের বর্মী বৌদ্ধ ভিক্ষু থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়! পাকিস্তানে বা মধ্যপ্রাচ্যে এত এত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিচরণ কেন? সেখানকার দম বন্ধ করা রাজনীতিই চরমপন্থীদের উত্থান ঘটিয়েছে! বাংলাদেশও ব্যতিক্রম না। সর্বহারা থেকে জামায়াত, সবার ই উত্থান টা গণতন্ত্রের সংকটকালীন। আমাদের মহান সংবিধানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে কোন সময়গুলাতে কারা রাজনীতিতে ধর্মের আমদানি ঘটিয়েছিলেন।

আসলে ডাকসু কোন সোনার কাঠি-রূপার কাঠি না। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। কিন্তু নির্বাচন না হলে সমস্যাগুলা দৃশ্যমান হয় না। আইয়ুব থেকে শুরু করে এরশাদ পর্যন্ত সবাই উন্নয়নের জোয়ারেই দেশটা ভাসিয়ে দিয়েছিল! মানুষ কি সেগুলো বিশ্বাস করে নি? না করলে তারা টিকে ছিল কিভাবে? বিশ্বাস করেছিল। কারণ তখন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ছাড়া আর কিছুর আওয়াজ সাধারণ মানুষের মাঝে দৃশ্যমান ছিলনা।

গণতন্ত্র থাকলে সমস্যা গুলা ভেসে ওঠে। আজকে ক্যান্টিনে খাবারের মূল্য যথাযথ কিনা, ভর্তি ফি যথাযথ কি না, এগুলা নিয়া আলোচনা হবে ডাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে। যারা যত বেশি মানুষের কথা বলবে, বোঝাতে সক্ষম হবে, তারাই নেতৃত্বে আসবে। পরমতসহিষ্ণুতা নাই। ঠিক আছে! পরমতসহিষ্ণুতা র চর্চা টা কিভাবে করবেন? যদি না সবাইকে চিল্লানোর সুযোগ দেন?

রাজনীতিবিদদের অনেকেই ব্যর্থ বলে, দুর্নীতিবাজ বলে, ধোঁকাবাজ বলে গালাগালি দেন। গণতন্ত্র আসলে এদের হাতেই যদি দেশটা থাকে তাহলে তো কোন উন্নতি হবে না। এই পরিস্থিতিতে কি করা দরকার সেটা গুরু আকবর আলি খান বলে দিয়েছেন! রাজনীতি ব্যর্থ হলে আরও বেশি রাজনীতি দরকার!! রাজনীতিতে যারা আছেন তারা কুলাইতে না পারলে আরও বেশি মানুষের রাজনীতিতে আসা দরকার। এটা কখন সম্ভব? ভাল মানুষ রাজনীতিতে আসবে কখন? যখন আপনি তাকে রাজনীতিতে আসার স্পেস টা দেবেন! যখন তাকে কথা বলার একটা প্লাটফর্ম দেবেন। এরকম প্লাটফর্ম হিসেবে ডাকসুর চাইতে বড় অপশন আছে এখানে?

এখন রাজনীতিতে ওপরে উঠতে চাইলে নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়! আর ডাকসু হলে যারা রাজনীতিতে আসতে চাইবেন, তাদেরকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। এই দুই প্রক্রিয়ায় যে দু’জন নেতা গড়ে উঠবে, তাদের কমিটমেন্ট এর পার্থক্য বুঝতে কি সক্ষম আমরা? নাকি জনগণের প্রতি, জনমতের প্রতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্বের কমিটমেন্ট কে আমরা ভয় পাই?

পেশাদারিত্ব: ডাক্তার বনাম সাংবাদিক

অন্যান্য অনেক পেশার চাইতে ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের পেশাদারী আচরণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভুল চিকিৎসার ফলে যেমন একজন মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে তেমনি ভুল সংবাদ পরিবেশনের ফলে লেগে যেতে পারে দাঙ্গা।

professionalism

মজার ব্যাপার হলো যুদ্ধক্ষেত্রেও এই দুই পেশার মানুষ নিরপেক্ষ বলে শ্রদ্ধা পান। অার কোন পেশার মানুষ এই সম্মান টা পান বলে আমার জানা নাই।

ডাক্তারদের পেশাদারি আচরণের মানদন্ড নির্ণয় করা কঠিন বটে। খুব সহজ কথায় তারা একাধারে হবেন সৎ, চৌকস এবং মানবতার সেবায় সদা নিবেদিত। ডাক্তারদের ছুটি বলে কিছু নেই। রোগী সামনে থাকলে তাকে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসার জন্য। তা সে হাসপাতালেই হোক বা হলিডে রিসোর্টেই হোক। এবং চিকিৎসা প্রদানে তিনি থাকবেন সৎ এবং মনোযোগী। কারণ তার একটু ভুলের খেসারত হতে পারে একটা জীবন।

এবার আসি সাংবাদিকদের কথায়। সাংবাদিকদের অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ এবং সত্য তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। দেশের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আইনের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা। এবং তথ্য সংগ্রহে হতে হবে চৌকস। সাংবাদিকদের সাফল্যের একটা উদাহরণ হলো ব্যাপক প্রশ্ন ফাঁসের পর আজকের অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল।

সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করবেন, সে ব্যপারে বিশেষজ্ঞ মতামত সংগ্রহ করবেন। এবং নিরপেক্ষ ও ববসবস্তুনিষ্ঠভাবে সে তথ্য পরিবেশন করবেন। কিন্তু সাংবাদিক নিজেই যদি হয় বিশেষজ্ঞ সেখানেই ঘটে বিপত্তি।

ডাক্তার বনাম সাংবাদিক এই দ্বৈরথে শুধু ডাক্তার নয়, সাংবাদিকদেরও পেশাদারিত্বের অভাব লক্ষণীয়। ডাক্তার যদি ডিউটি টাইমে ডেটিংএ যান এ বিষয়ে নিউজ করার জন্য বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার নাই অবশ্যই। ডাক্তার যদি অফিস টাইমে প্র্যাকটিস করেন, এ বিষয়েও বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার নাই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার কত টাকা কমিশন নেন এ ব্যাপারেও নিউজ ছাপানোর জন্য বিশেষজ্ঞ মতামতই যথেষ্ট।

কিন্তু ডাক্তার ভুল চিকিৎসা দিল নাকি সঠিক চিকিৎসা দিল এই ব্যাপারটা সাংবাদিক জানবেন কি করে? অবশ্যই তাকে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে হবে। চিকিৎসা ভুল ছিল নাকি সঠিক ছিল এইটা বোঝার জন্য সাংবাদিককে চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী এই রকম কারো কাছেই মতামত নিতে হবে। রোগী মারা গেলেই চিকিৎসা ভুল ছিল, এটা আবেগ ভিন্ন কিছু নয়। ডাক্তারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য এই আবেগ যথেষ্ট নয়।

আমাদের দেশে ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ টাইপের সংবাদ গুলোতে কোনটাতেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কোন মতামত দেখি না। এটা পরিষ্কার ভাবে পেশাদারিত্বের লঙ্ঘন। মানুষের বিবেক ভোঁতা হলেও কারও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেখলে বা নিউজপেপারে নিউজ দেখলে মানুষ গর্জে ওঠে। এতে দাঙ্গাও বাধতে পারে। এমনকি ডাক্তারের জীবন হতে পারে বিপন্ন।

ডাক্তার, ‍সাংবাদিক সহ সকল পেশাজীবীর পেশাদারিত্বের মানদন্ড নির্ণয় করা হোক। সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। ব্যক্তিগত/পেশাগত দ্বন্দ্বের কুৎসিৎ বিস্ফোরণে কারও জীবন যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।

 

বিঃদ্রঃ মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে আর  সেই কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তাররা হবেন ফেরেশতার মত এটা আশা করা বাতুলতা মাত্র।